বিশেষ প্রতিনিধি:: আজিজুর রহমান শ্রেষ্ট ব্যক্তিত্বের আলোকিত উদাহরণ, জীবনাচরণে যথেষ্ট নীতিবান, শুদ্ধতম বাঙালি, সজ্জন, বিনয়ী আদর্শবাদী মানুষ। চাওয়া পাওয়ার অনেক উর্ধে উঠে একজন আত্মত্যাগী মনুষ , আজিজুর রহমান তিন-তিন বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে মৌলভীবাজারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। একবার পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। জীবনে মানুষের ভালবাসা পেয়েছেন প্রচুর। জনসেবা করেই গেছেন দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে। বাড়ি গাড়ি করেননি। করেননি বিয়ে-থা’ও। অকৃতদার এ রাজনীতিবিদের কাছে রাজনীতি হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট জনসেবা। তবে এখন তার উপলব্ধি রাজনীতিকরা আজ আর সেভাবে চিন্তা করেন না বলেই রাজনীতি সাধারণের কাছে একটি বাজে চর্চা হিসেবে ধারণা পাচ্ছে। তারপরও বর্তমান প্রজন্মকে নিয়ে তিনি আশাবাদী। তার বিশ্বাস এরা আবারও রাজনীতির সোনালি সে দিন ফিরিয়ে আনবেন। মৌলভীবাজার শহরতলির গুজারাঈ গ্রামের আজিজুর রহমান এক সময়ের প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রত্যক্ষ নির্দেশে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের সময়। তার কথা তখন মূলত তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করতেন। পরিচিতিও ছিল তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমাজুড়ে। তখন স্নাতক পাস করা এ যুবককে চিনতেন হবিগঞ্জ জেলার প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ দেওয়ান ফরিদ গাজী। সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে তার বাড়িতে এক আলাপচারিতায় এ প্রবীণ রাজনীতিবিদ আজিজুর রহমান জানান, এ আন্দোলনের সময় (দিন তারিখ মনে নেই) শেখ মুজিবুর রহমান সাংগঠনিক সফরে মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট যান। এ সময় পারিবারিক কাজে তিনিও সিলেট ছিলেন। সিলেট থেকে আসার পথে লোক সমাগমের ভিড়ে সিলেট রেললাইনের কাছে গাড়ি আটকে যায়। গাড়ি থেকে নামতেই দেওয়ান ফরিদ গাজী তার হাত ধরে বলেন, শেখ সাহেব তোমাকে খুঁজছেন। চলো বলেই এক বাড়িতে নিয়ে যান এবং বঙ্গবন্ধুর সামনে হাজির করে বলেন, ‘আজিজ রাজনীতিতে আসতে চায় না’। কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, রাজনীতি কম বুঝি। তার কথা শুনে বঙ্গবন্ধু তার পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বলেন, ‘২৫ বছরে না বুঝলে কবে বুঝবে’? তখন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আবদুল মুমিন। বঙ্গবন্ধু তাকে ডেকে বলেন, ‘আজিজ আওয়ামী লীগে যোগদান করবে’। এভাবেই তার সক্রিয় আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে পথচলা শুরু। এরপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজনীতি হয়ে পড়ে তার ধ্যান-জ্ঞান। সাংগঠনিক দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের কারণে স্বাধীনতা-পূর্ব ও উত্তরকালে মৌলভীবাজার মহকুমা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক, পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিকবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেন। এখন প্রায় রাজনৈতিক অবসরে থাকলেও রাজনীতিচর্চামুক্ত নন। সর্বদা লুঙ্গি পরা, খেটে খাওয়া মানুষের প্রাণপ্রিয় এ মানুষটি সম্প্রতি পবিত্র হজ পালন করে এসেছেন। তবে রাজকীয় অতিথি বা কারও আমন্ত্রণে নয়। একান্ত নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে। এখন শ্মশ্রুমণ্ডিত আজিজুর রহমান বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই থাকেন। জানালেন আমার জীবনে দু’বার দাড়ি রেখেছি। একবার দেশ হানাদারমুক্ত করার জন্য আর এখন রেখেছি নিজেকে মুক্ত করার জন্য। অকৃতদার থাকা প্রসঙ্গে উত্তর দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ৭১ সালে হানাদাররা যখন ধরে নিয়ে যায় ভাবিনি ফিরে আসবো। আর যখন ফিরি তখনই সিদ্ধান্ত নেই আমি শুধু আমার জন্য বাঁচবো না। বাঁচবো মানুষের জন্য। মানুষের সেবা করবো। তাই সংসারের চিন্তা বাদ দেই যা আজও বহাল। নিজের জবানিতে জানান, ১৯৫৪ সালে সারা দেশে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলেও মৌলভীবাজারে মুসলিম লীগ জয়লাভ করে। মৌলভীবাজারে মুসলিম লীগের এমন শক্ত অবস্থান টলাতেই তাকে মহকুমা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দায়িত্ব এবং পরে মাত্র ২৮ বছর বয়সে সত্তরের নির্বাচনে এমপি মনোনয়ন দেয়া হয় এবং দক্ষতার সঙ্গে জয়লাভ করেন।
আজিজুর রহমান সমর্থক গোষ্ঠী ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগ্রহিত